নেকবর হোসেন।।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রাম জলাশয়ের বিস্তীর্ণ পদ্মবিল এখন বাহারি রঙে সেজে উঠেছে। প্রায় ১২ একর জায়গাজুড়ে গোলাপি, সাদা, নীল ও বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্মফুলে সেজে উঠেছে জলাশয়টি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, প্রকৃতি নিজ হাতে রঙের পসরা সাজিয়েছে।
দিগন্তজোড়া পদ্মফুলের মেলা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সের প্রকৃতিপ্রেমীরা। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুবান্ধব মিলে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পদ্মবিলে। বিলের পাড়ে বাঁধা সারি সারি নৌকা, চারপাশে মৌমাছির গুঞ্জন, আর ওপরে উড়ে বেড়াচ্ছে ডাহুক, সারস, বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখি। তাদের কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে উঠেছে চারদিক।
তবে স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পদ্মের সংখ্যা কিছুটা কম। বিশেষ করে হলুদ পদ্মফুল প্রায় বিরল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মূলত গোলাপি ও সাদা রঙের পদ্মেই ভরে আছে বিল। দর্শনার্থীদের আগমনে স্থানীয়দের আয়ের নতুন সুযোগও তৈরি হয়েছে।
উদ্ভিদবিদদের মতে, পদ্মফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এটি রাতে ফোটে এবং ভোরের পর সূর্যের প্রখর রশ্মিতে বন্ধ হতে শুরু করে। পদ্মফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, মানবদেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ, চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বিজ্ঞানীদের মতে, পদ্ম জলজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম কার্বন শোষণক্ষম প্রজাতি। এটি বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও পানির ভারি ধাতু যেমন সিসা, তামা, ফ্লোরাইড ও নাইট্রেট শোধনে ভূমিকা রাখে। তাই পদ্ম থাকা জলাশয়ের পানির মান সাধারণত ভালো থাকে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ওষুধ, খাবার ও কসমেটিক পণ্যে পদ্মের ব্যবহার বাড়ছে, যার বাজারমূল্য ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ইসলাম জানান, “আমি নিয়মিত পদ্মবিলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসছে পদ্ম দেখতে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসকও বিলের প্রতি নজর রাখছেন। পদ্ম নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে, আমরা এর ইতিবাচক ফলাফল আশা করছি।”
কুমিল্লা গেজেট