মানুষের জীবনে সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে অপরকে আঘাত করা। কথা দিয়ে, আচরণ দিয়ে, কিংবা নিঃশব্দ অবহেলার মধ্য দিয়েও আমরা প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে ফেলি কাউকে। কখনো বুঝে, কখনো না বুঝেই। কিন্তু এর চেয়েও কঠিন একটি কাজ আছে-নিজেকে সংযত রাখা। এমনভাবে জীবনযাপন করা, যেন নিজের আচরণে কেউ না কাঁদে। আমি এই কঠিন পথটাই বেছে নিয়েছি।
পরিবার থেকে শুরু করে কর্মস্থলসহ সবখানেই আমি চেয়েছি, কেউ যেন আমার কারণে বিষণ্ন না হয়। আমি নিজে অভিমান পুষে রাখতে পারি, অশ্রু লুকাতে পারি, কিন্তু কাউকে কাঁদাতে আমার মন সায় দেয় না। কেননা আমি বিশ্বাস করি, মানুষের অন্তরে অনিচ্ছাকৃত কষ্টও রেশ রেখে যায়। সেসব ক্ষত সময় হয়তো শুকিয়ে দেয়, কিন্তু চিহ্ন থেকে যায় গভীরে।
আমার এ নীতির পেছনে কোনো কৃত্রিম ভাবনা নেই। নেই আত্মপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যও। আছে কেবল একটাই আকুতি-যদি কখনো আমার কথা, আমার ব্যবহার, কিংবা আমার অবস্থান কারো হৃদয়ে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে আমি নিজেকেই দায়ী মনে করি। কারণ একজন মানুষ তার চারপাশে আলো বা আঁধার দুটোই ছড়িয়ে দিতে পারে, আমি চেষ্টা করি আলো হওয়ার।
জীবনের প্রতিটি দিনই নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আমি চাই প্রতিটি সম্পর্ক, প্রতিটি সংলাপ হয়ে উঠুক শান্তির ও সহমর্মিতার। আমি এটাও চাই, যাদের সঙ্গে আমার পথচলা, তাদের চোখে আমার জন্য শ্রদ্ধা থাক, ক্ষোভ নয়।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমায় আমৃত্যু এই নীতির পথেই রাখেন। যেন আমি নিজের কান্না নিয়ে চলতে পারি, কিন্তু কারো অশ্রুপাতের কারণ না হই। যেন আমার উপস্থিতি হয়ে ওঠে আশ্বাসের, আস্থার, আর ভালোবাসার প্রতীক। কারণ, এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকা চাই, যারা নিজে ভাঙে, কিন্তু কাউকে ভাঙে না।