জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশে প্রথম ছাত্রলীগ দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী তামিম হোসেন। কিন্তু সদ্য প্রকাশিত আহতদের তালিকার গেজেটে নেই তার নাম। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আহত তামিম ও তার পরিবার হতাশা প্রকাশ করেছেন। তামিম হোসেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জানা গেছে, আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ১২ মে কুমিল্লার ধর্মপুরে ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি শাখায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে একদল শিক্ষার্থী এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তামিম ভিডিও ধারণ করছিলেন। তখন বাধাদানকারীদের কয়েকজন তামিমের মোবাইল কেড়ে নেন। পরে তাকে মোবাইল ফিরিয়ে দেবেন বলে হলের দিকে নিয়ে যান। সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা তাকে নির্যাতন করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে সে অচেতন হয়ে পড়লে ভয়ে পুলিশকে খবর দেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। খবর পেয়ে কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন। এ বছরের ৪ মার্চ গেজেট প্রকাশ হলেও তা প্রকাশ্যে আসে বুধবার (২১ মে)। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে কুমিল্লায় আহত ৩৫৭ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য দেয়া হয় এক লাখ টাকা। কিন্তু এতে নেই তামিমের নাম। আহত শিক্ষার্থী তামিম হোসেন বলেন, নির্যাতনের পর দুদিন হাসপাতালে ছিলাম। নির্যাতনের ফলে আমি মানসিকভাবে খুবই সমস্যায় পড়ি। কয়েকদিন নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যেতাম। এখনও শারীরিকভাবে ভালো নেই। একজন চিকিৎসকের পরামর্শে আছি। আমার নাম তালিকায় নেই। অনেকবার ওয়েবসাইটে গিয়েও আমার নাম খুঁজে পাইনি। তিনি বলেন, আমি কলেজে সব ডকুমেন্টস জমা দিয়েছি। সকল কিছু কলেজ কর্তৃপক্ষও নাকি জমা দিয়েছে। এরপরেও আমার নাম কেন নেই জানি না। তামিমেরা বাবা আলী আসাদ বলেন, আন্দোলন থেকে ছাত্রলীগ আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। হলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে দুই ঘণ্টা। নির্যাতনের নির্মমতা বর্ণনা আমার পক্ষে সম্ভব না। তামিমের চিকিৎসার জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। ওই সময়গুলো আমাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। কোতোয়ালি মডেল থানায় একটা অভিযোগ করেছিলাম। ওই অভিযোগের কোনো সুরাহা পাইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, আমরা তালিকা দেখেছি। তামিমকে আমি চিনি। সারাদেশের কি না তা জানি না, তবে কুমিল্লায় প্রথম ছাত্রলীগ তাকেই হামলা করেছে সেটা জানি। মূলত যারা এখনও চিকিৎসাধীন তাদের এই সহযোগিতা করা হয়েছে। এগুলো আমি লাইভে এসে সবাইকে ফোন দিয়ে দিয়ে যাচাই করেছি। তামিম এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন আপনি জানেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারটি জানি না। কিন্তু আমি বলব যাদের তালিকায় নাম আসেনি, তারা সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করলে আমি দেখব। এই কমিটিতে আমি ছাড়াও অনেকে ছিল। যারা এগুলো যাচাই করেছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক গাজী মুহাম্মদ গোলাম সোহরাব হাসান বলেন, আমরা ৫ মে তালিকা সাবমিট করেছি। কেন তার নাম আসেনি জানি না। আমরা সকল নথি সাবমিট করেছি। এ সময় তিনি বলেন, তামিমের বিষয়টি জানার পর কলেজ অধ্যক্ষ আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ৮ মে আমরা পাঠানোর তিনদিন পর তিনি তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। তামিম প্রথম দিকের আহত। আমরা বুঝতে পারছি না তার নাম কেন আসেনি।